বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৯ অপরাহ্ন
খেলাধুলা ডেস্ক:
লিওনেল মেসি আবারও জানিয়েছেন জীবনের পরের অধ্যায় তিনি কাটাতে চান বার্সেলোনাতেই। ইন্টার মায়ামি তারকা বলেছেন, ২০২১ সালে যে হঠাৎ করে বার্সেলোনা ছাড়তে হয়েছিল, সেটি তাঁর স্বপ্নের বিদায় ছিল না।
সম্প্রতি ক্যাম্প ন্যু-তে হঠাৎ উপস্থিত হয়ে আলোচনায় আসেন মেসি। তখন স্টেডিয়ামটি সংস্কারের কাজ চলছিল। সেখানে তোলা কিছু ছবি তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে লিখেছিলেন, “আশা করি একদিন ফিরে এসে সেই বিদায়টা নিতে পারব, যা খেলোয়াড় হিসেবে কখনো নেওয়া হয়নি।”
এর পরদিনই দিয়ারিও স্পোর্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেসি বলেন, “আমরা বার্সেলোনাকে ভীষণভাবে মিস করি। বাচ্চারা, আমার স্ত্রী- সবাই মিলে প্রায়ই বার্সেলোনার কথা বলি। আমাদের সেখানে বাড়ি আছে, সবকিছুই আছে। তাই ভবিষ্যতে আমরা সেখানেই ফিরে গিয়ে থাকতে চাই।”
গত রবিবার মেসির সেই হঠাৎ আগমন ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত। আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের হয়ে আলিকান্তেতে যোগ দেওয়ার আগে তিনি বার্সেলোনায় এসে রদ্রিগো ডি পলকে সঙ্গে নিয়ে সরাসরি ঢুকে পড়েন ক্যাম্প ন্যু-তে।
নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে স্টেডিয়ামে প্রবেশের অনুমতি দেন এবং সেখানেই তোলা কয়েকটি ছবি তিনি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন- মাত্র ২৪ ঘণ্টায় যেগুলোর লাইক সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ২ কোটি ২০ লাখ! এটাই ছিল ২০২১ সালের পর মেসির প্রথমবার ক্যাম্প ন্যু-তে ফেরা। সেই বছরই তিনি বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দিয়েছিলেন।
সাক্ষাৎকারে মেসি আরও বলেন, “আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি স্টেডিয়ামটা আবার পুরোপুরি শেষ হওয়ার জন্য। কারণ প্যারিসে চলে যাওয়ার পর থেকে আমি আর ক্যাম্প ন্যু-তে ফিরে যেতে পারিনি। এরপর তো বার্সা খেলতে শুরু করে মন্টজুইক অলিম্পিক স্টেডিয়ামে। যখন আবার সেখানে ফিরব, তখন হয়তো খুব অদ্ভুত লাগবে। কারণ শেষবার দেখেছিলাম বহুদিন আগে। কিন্তু ফিরে গিয়ে সব স্মৃতি মনে পড়লে সেটা নিঃসন্দেহে খুব আবেগঘন মুহূর্ত হবে।”
২০২৩ সাল থেকে বার্সেলোনা খেলছে অলিম্পিক স্টেডিয়ামে। কারণ ক্যাম্প ন্যু–তে চলছে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ইউরো ব্যয়ের পুনর্গঠন কাজ। সম্প্রতি সেখানে ২৩ হাজার দর্শকের সামনে একটি উন্মুক্ত অনুশীলনও অনুষ্ঠিত হয়। ক্লাবটির আশা, চলতি বছরের শেষের দিকেই তারা অন্তত ৪৫ হাজার দর্শক নিয়ে ফিরতে পারবে তাদের আসল ঘরে।
তবে পুরো স্টেডিয়ামের কাজ শেষ হতে সময় লাগবে আরও কয়েক বছর। সম্ভাব্য সময় ২০২৭ সাল। তখন ধারণক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ১ লাখ ৫ হাজার। ক্লাব সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, নতুন ক্যাম্প ন্যু উদ্বোধন করতে চান এক বিশেষ ম্যাচ দিয়ে, লিওনেল মেসির সম্মানে। যদিও মেসি সরাসরি কিছু বলেননি, তবে তার কথায় বোঝা যায়, বার্সেলোনার সঙ্গে সম্পর্ক এখনো শেষ হয়নি।
মেসির কণ্ঠে খানিক কষ্ট মিশে ছিল, “যেভাবে সব কিছু ঘটল, তাতে মনটা ভরে না। শেষ কয়েকটা মৌসুম তো আমি দর্শকবিহীন মাঠে খেলেছি, মহামারির সময়। জীবনের পুরোটা সময় যেই ক্লাবে কাটালাম, সেখান থেকে এমন বিদায় কল্পনাও করিনি।”
তিনি আরও বলেন, “আমার পরিকল্পনা ছিল ইউরোপে পুরো ক্যারিয়ারটা বার্সেলোনায় কাটিয়ে তারপর মায়ামিতে যাওয়া। যেমনটা এখন করেছি। কিন্তু পরিস্থিতি এমনভাবে বদলে গেল যে বিদায়টা হয়ে গেল অদ্ভুত, অসম্পূর্ণ।”
আজও তিনি সেই অসম্পূর্ণ বিদায়ের ক্ষত বয়ে বেড়ান। আর আশা রাখেন, একদিন হয়তো ফিরবেন নিজের ঘরে, যেন নিতে পারেন সেই ‘বিদায়’, যেটা কখনো নেওয়া হয়নি।
ভয়েস/আআ